Monday, March 11, 2013

স্বপ্নচারীর বৃত্তি পাচ্ছে বন্ধুঘরের তিন মেধাবী

সৃষ্টিশীল তরুণ্যের স্বপ্নের সংগঠন স্বপ্নচারী। হতাশায় আলোর বীজ বোনা আর সেই বীজ থেকে সুইয়ের ফোরের মতো চারা গাজিয়ে তোলাই এ সংগঠনের লক্ষ্য। ক'জন স্বপ্নবান তরুণের হাত ধরে সেটি চলছে জোর গতিতে। ইতোমধ্যেই সারাদেশের মানুষকে বই পড়ানোর কাজে এসেছে যথেষ্ট সফলতা। তার সঙ্গে সম্প্রতি যোগ হল দেশের এতিম গরিব ও সুবিধাবঞ্চিত মেধাবী শিশুদের বৃত্তি প্রদান। গত শুক্রবার (৮মার্চ১৩) ঢাকার সীমান্তবর্তী জেলা শেরপুরের তিনজন ছাত্র/ছাত্রীর পুরো ১ বছরের খরচের দায়িত্ব নেয়ার মাধ্যমে চালু হয় এই কার্যক্রম। 


যারা পাচ্ছে বৃত্তি
তাদের অনেকের ঘরে হয়তো তিনবেলা খাবার জোটে না। কারো বাড়িতে এখনো বিদ্যুত আসেনি। হারিকেন কিংবা মোমের আলোয় ওরা পড়ালেখা করে। তাতে কি! শহরের সুবিধাবঞ্চিত এসব শিশু পরীক্ষায় এনেছে আলোর ফোয়ারা। উজ্জ্বল করেছে মা-বাবার মুখ। উচু করেছে এলাকার সম্মান। 
তিনজনের একজন জনি। পুরো নাম জয়নাল আবেদিন জনি। পড়ছে ক্লাস সেভেনে। ক্লাসে তার রোল এক। ফাইভে জিপিএ ৫ পেয়েছে। পড়ালেখা চলছে ঠিকই। কিন্তু তার বাবা শারীরীক প্রতিবন্ধি। কৃষিকাজ করেন। ঠিকমতো তার পক্ষে ছেলের পড়ার খরচ দেয়া সম্ভব হয় না।
দ্বিতীয় জন রুপসী খাতুন। পড়ে নর্থস্টার স্কুলে। এবার জেএসসি দেবে। সেও ফাইভে জিপিএ ৫ পেয়েছে। তবে তার বাবারও একই সমস্যা। চা বিক্রি করে সামান্য আয়। সেই আয়ে ৭ সদস্যের সংসার। মাস শেষে সম্ভব হয় না স্কুলের বেতন দেয়া। 
তৃতীয়জন আবির হোসেন। সে পড়ে ইকরা বিদ্যানিকেতনে নবম শ্রেণিতে। তার বাবা রিকসা চালক। এলাকার সবচেয়ে বেশি গরিব বলা যায় তাদের। এখনো শনের ঘরে তাদের বসবাস। তার স্কুলের খরচ সে দিতে পারে না কোনো মাসেই। অন্যান্য খরচ তো আছেই। 
এমন তিনজন ছাত্র/ছাত্রীর দায়িত্ব নিয়েছে স্বপ্নচারী। তবে তাদের কোনো ফান্ড থেকে নয়। স্বপ্নচারীর সদস্যদের খরচের অংশ থেকেই তারা টাকা বাচাচ্ছেন। সেই টাকা দিচ্ছেন এই মেধাবীদের।
তাদের বাছাই করা হয়েছিল আগেই। বাকি ছিল আনুষ্ঠানিকতা। সেটাও সারা হলো শুক্রবার। ময়মনসিংহ থেকে এলেন স্বপ্নচারীর বন্ধু মাহফুজুর রহমান মিমো। এর আগেই বন্ধুঘর পাঠাগারে চলে এসেছে তিন। এসেছেন তাদের অভিভাবক, স্কুলের প্রিন্সিপাল ও এলাকার অনেকেই। মিমো ভাই তাদেরকে সবকিছুর বৃত্তান্ত বললেন। তারপর একে একে বৃত্তির টাকাগুলো তুলে দেয়া হলো হাতে হাতে। পাশে থেকে সজাগ হয়ে ওঠল কয়েকটা মোবাইল ক্যামারা। 
যাদের মুখে একটু আগেও ছিল অভাবি সংসারের বেদনা। বাবা-মার চোখে ছিল হতাশার ঘোর। মুহূর্তেই এক চিলতে হাসি বয়ে গেল তাদের মুখে। সেই হাসি ঝিলিক দিয়ে মিশে গেল নির্লিপ্ত আকাশে। 
ইকরা বিদ্যা নিকেতনের প্রিন্সিপাল আকতারুজ্জামান কাজল বলেন, আবির খুব ভালো ছেলে। আমরা ওর ব্যাপারে অনেক আশাবাদী। ও আমাদের বেতন দিতে পারত না। আমরা কোনোরকম করে ওকে চালিয়ে নিতাম। এটা পাওয়ায় আবির খুবই খুশি হয়েছে। আমরা আশা করছি ও সামনে ওর সাফল্য ধরে রাখবে। 
রুপসী ও জনীর ব্যাপারে সব সময় কনফিডেন্স রাখেন তাদের টিচার। প্রিন্সিপাল মিজানুর রহমান লিটন ও জয়নাল আবেদিন বলেন, আমাদের স্কুলের নাম ওরাই ছড়িয়ে দেবে। ওরা আগামী অনেক ভালো করবে বলেই আমরা বিশ্বাস করি। 
স্কুলের প্রিন্সিপালরা স্বপ্নচারীকে অনেক ধন্যবাদ জানিয়েছেন গরিব মেধাবীদের এই সহায়তার জন্য।

6 comments:

ভালো লাগা রইল... অনেক ধন্যবাদ