ঘরকুটুম

ঘরকুটুম পরিবার

::উপদেষ্টা::
শাশ্বত মনির

::শুভাকাক্সিক্ষ::
লাবীব আবদুল্লাহ
শহিদুর রহমান মাস্টার
শাহীন মিয়া
মিজানুর রহমান লিটন

::সম্পাদক::
রোকন রাইয়ান

::সহ সম্পাদক::
ডা. শামীম খান
শাহীন শিমুল::অফিস তত্ত্বাবধায়ক::
আরিফুল ইসলাম

::মূল্য::
পাঁচ টাকা

::যোগাযোগ::
বন্ধুঘর পাঠাগার
লয়খা নতুন বাজার, জুলগাঁও
ঝিনাইগাতি, শেরপুর-২১০০
০১৭১৭৮৩১৯৩৭
০১৮৩৮৬৫১৯৮৯

বর্ষশুরু সংখ্যা ২০১৩ ॥ মূল্য ৫ টাকা
এ সংখ্যার প্রচ্ছদ : শাকির এহসানুল্লাহ

শুরুর কথা
অনেক সম্ভাবনা আর সোনালি সুদিন প্রত্যাশী ঘরকুটুম। নিয়মিত প্রকাশনার এটি দ্বিতীয় সংখ্যা। এর আগে ঘরকুটুমের ১ম সংখ্যা পাঠকের হাতে পৌঁছেছে। ১ম  সংখ্যার আবেগী প্রশংসা আমরা পেয়েছি অনেক। তবে বাস্তবতায় কাউকে আমরা সঙ্গী হিসেবে পাই নি। ছোট্ট বন্ধুদের অনেক লেখা আমাদের হাতে এসেছে। যেটা লয়খার মতো অজপাড়াগাঁ থেকে কল্পনাতীত। সেটাই আমাদের জন্য অগণন প্রেরণা হয়ে কাজ করছে। পথ চলায় নির্ভার করছে অকেক ক্ষেত্রে। তবে বাস্তব আর কল্পনা ভিন্ন জিনিস। ভিন্ন সূত্র। পত্রিকার একটা সংখ্যা প্রকাশ অনেক ব্যয়বহুল। প্রয়োজন বিজ্ঞাপন। সেসবে আমরা সাড়া পাই নি। তবে নিরাশ হই নি। আমরা বিশ্বাস করিÑ তরুণরা দাঁড়িয়ে গেলে পৃথিবীতে অনেক কিছু সম্ভব এবং একদিন এই পাড়াগাঁ থেকে সেটা দাঁড়াবেই ইনশাআল্লাহ।
প্রথম সংখ্যার জন্য পরামর্শ, দুর্বার সাহস, শক্তি ও সামর্থে আমাদের পাশে ছিলেন বিশিষ্ট লেখক, সম্পাদক, ও শেরপুরের পরিচিতজন জনাব শাশ্বত মনির। আশা করি তিনি আমাদের এই ক্ষুদ্র আয়োজনের সহযোগিতা অব্যাহত রাখবেন। আমাদের চলার পথকে গতিময় করবেন। পত্রিকার প্রচার-প্রসারে অনেকেই কাজ করছেন। তাদের সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।

::শু ভে চ্ছা ক লা ম::

এগিয়ে যাও বন্ধুরা
মুহাম্মদ মনিরুজ্জামান (শাশ্বত মনির)

প্রতিটি মানুষই সামাজিক দায়বোধ নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। তরুণদের কাছে সেই দায়বোধটা আরো বেশি। তরুণরা পারে অনেক কিছুই। কেবল তাদের প্রবল ইচ্ছাশক্তিটা দরকার। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন ও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে আমাদের তরুণরা যে অবিস্মরণীয় অবদান রেখেছে তা সত্যিই কল্পনাতীত। আজকের তরুণদের কাছেও এমন কিছু কাজ প্রত্যাশা করে দেশ ও জনগণ।
একসময় আমার একান্ত ইচ্ছায় এলাকায় একটি পাঠাগার করেছিলাম। নিজে প্রচুর পরিমাণে বই পড়ার পাশাপাশি অন্যকে পড়িয়েছি। উৎসাহ দিয়েছি। আমি ঢাকায় আসার পর সেটা আর টিকে থাকেনি দায়িত্ববান মানুষের অভাবে। তবে পাঠাগারের প্রতি আমৃত্যু ভালোবাসা আমার হৃদয়ে আছে। আমার পাশের এলাকায় বন্ধুঘর পাঠাগারের মতো একটি চমৎকার আয়োজন দেখে আমি আবারো আশান্বিত হয়েছি। অনেক তরুণ এটার সঙ্গে কাজ করছে। তাদের চোখে মুখে আমি আগামীর উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখেছি। তারা চাইলে ভালোকিছু করতে পারবে এলাকায়।
আর ঘরকুটুমের কথা না বললেই নয়। আমাদের মধ্যে পরসংস্কৃতি ও বিনোদনের প্রভাবটা এত পরিমাণ বেড়েছে যা প্রতিটি দায়িত্ববান মানুষকে ভাবায়। ঘরকুটুম থেকে আমাদের সন্তানরা ভালো কিছু পাবে। বাঙালি সংস্কৃতি ও সাহিত্য চর্চার বিশাল প্লাটফর্ম হয়ে ওঠবে এমনটাই ঈঙ্গিত পাচ্ছি। অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন রইল বন্ধুঘর ও ঘরকুটুম পরিবারের প্রতি। টগবগে তরুণদের এ কর্মপ্রয়াস আলো ছড়াবে একদিন, এ শুভ কামনা সব সময়।

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, সাপ্তাহিক শীর্ষ খবর
প্রধান পরিচালক, ওরাকল বিসিএস কোচিং
সহ. অধ্যাপক (আইন), আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি



::প্রধান রচনা::

কা ক ন রে জা
যুক্তি ও মুক্তির ধর্ম ইসলাম

সেদিন একটি ইসলামী জলসার বক্তব্য শুনছিলাম। প্রধান বক্তার আগে একজন বক্তব্য রাখছিলেন। অনেক ভালো কথা তিনি বললেনÑ ভালো লাগছিল। মন দিয়ে শুনছিলাম। কিন্তু একটি জায়গায় এসে খটকা লাগলো। তিনি বলছিলেন ‘যুক্তিতে মুক্তি নাই’ ধর্মের প্রতি বিশ্বাসের কথা বোঝাতে তিনি এই বাক্যটির অবতারণা করেন। আমি কোনো ইসলামি চিন্তাবিদ নই- হয়তো ইসলাম সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান আমার সীমিত সে কারণেই সম্ভবত এমনটি হয়েছে।
ইসলাম আমার জানা মতে সবচেয়ে লজিক্যাল ধর্ম। স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনকে অন্ধভাবে অনুসরণে নিরূৎসাহিত করেছেন। তিনি কুরআনকে বুঝে শুনে অনুসরণ করতে বলেছেন। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কুরআনের প্রতিটি সূরাতেই যুক্তি ও উদাহরণের মাধ্যমে মানবজাতির কাছে পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধানের ধারণাটি প্রতিষ্ঠা করেছেন।
সূরা সেজদাহ’র ২ নম্বর আয়াতে রয়েছে ‘এ কিতাবের অবতরণ বিশ্বপালনকর্তার কাছ থেকে- এতে কোনো সন্দেহ নেই।’ আর এটা যে সত্য তা অবিশ্বাসীদের বোঝানোর জন্য পরিষ্কার যুক্তি তুলে ধরে ২৭ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহতায়ালা ঘোষণা করছেন- ‘তারা কি লক্ষ্য করে না যে, আমি উষর ভূমিতে পানি প্রবাহিত করে শস্য উদ্গত করি, যা থেকে ভক্ষণ করে তাদের জন্তুরা, তারা কি দেখে না?’।
কুরআন যে আল্লাহতায়ালার কাছ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে এটা বিশ্বাস করার জন্য আল্লাহতায়ালা সূরা সেজদাহ’র ২ নম্বর আয়াতটিই যথেষ্ট। কিন্তু মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বোঝানোর জন্য পরিষ্কার যুক্তি তথা উদাহরণ দিয়ে উপস্থাপন করেছেন।
সূরা ইয়াসিনের ৩৩ নম্বর আয়াতে মহান রাব্বুল আলামিন বলেছেন- ‘তাদের জন্যে একটি নিদর্শন মৃত পৃথিবী। আমি একে সঞ্জীবিত করি এবং তা থেকে উৎপন্ন করি শস্য, তারা তা থেকে ভক্ষণ করে।’  বিজ্ঞানও একই কথা বলে। অবিশ্বাসীদের প্রতি আল্লাহতায়ালার কত আগে পাঠানো যুক্তি অধুনা যা বিজ্ঞান স্বীকার করে সমর্থন করে। ৩৪ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে- ‘আমি তাতে সৃষ্টি করি খেজুর ও আঙ্গুরের বাগান এবং প্রবাহিত করি তাতে নির্ঝরিণী।’  ৩৫ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছেÑ ‘যাতে তারা তার ফল খায়। তাদের হাত একে সৃষ্টি করে না। অত:পর তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না কেন?’  কি চমৎকার যুক্তি দিয়ে মহান রাব্বুল আলামিন মানুষকে বুঝিয়েছেন। এমন যুক্তিকে অস্বীকার করার কি কোনো উপায় আছে। মানুষকে অবশ্যই মহান আল্লাহতায়ালার প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করতে হবে- এছাড়া মুক্তির আর কোনো পথ নেই। পবিত্র কুরআনে যুক্তি দিয়ে উদাহরণ দিয়ে প্রতিটি সূরায় মহান আল্লাহতায়ালার মহিমা বর্ণনা করা হয়েছে। সূরা ইয়াসিনের ৩৯ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে- ‘চন্দ্রের জন্যে আমি বিভিন্ন মনজিল নির্ধারিত করেছি। অবশেষে সে পুরাতন খর্জুর শাখার অনুরূপ হয়ে যায়।’ ৪০ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে- ‘সূর্য নাগাল পেতে পারে না চাঁদের এবং রাত আগে চলে না দিনের। প্রত্যেকেই আপন আপন কক্ষপথে সন্তরণ করে।’ কি সত্য যুক্তি- কি যুক্তিময় উদাহরণ। কুরআন ছাড়া অন্য কোথাও কি এমন বিজ্ঞানসম্মত যুক্তি পাওয়া সম্ভব?
সূরা হুদ এর ২৪ নম্বর আয়াতে মহান রাব্বুল আলামিন বলেন- ‘উভয় পক্ষের দৃষ্টান্ত হচ্ছে যেমন অন্ধ ও বধির এবং যে দেখতে পায় ও শুনতে পায় উভয়ের অবস্থা কি এক সমান? তবুও তোমরা কি ভেবে দেখ না?’ কি চমৎকার যুক্তি- এমন যুক্তি কি লংঘন করার কোনো উপায় আছে? প্রতিটি আদেশ ও উপদেশ দেয়ার জন্য মহান আল্লাহতায়ালা পবিত্র কুরআনে এমন অসংখ্য যুক্তি ও উদাহরণ দিয়েছেন।
এমন যুক্তিময় একটি ধর্মকে, এমন মহান একটি ধর্মকে শুধুমাত্র অন্ধ অনুসরণ করা কি উচিত? ইসলাম সম্পর্কে যারা জ্ঞান রাখেন তারা কিন্তু যুক্তিকে সামনে রেখেই ইসলামকে উপস্থাপন করেন। জাকির নায়েক খুব যুক্তি ছাড়া কি কথা বলেন? ইসলামী জ্ঞানে যারা সমৃদ্ধ তাঁরা জানেন- ইসলাম এমন একটি ধর্ম যা যুক্তির আগুনে পোড়া খাঁটি সোনা।
ইসলামই যুক্তির পথে দেখিয়েছে- শান্তির এই ধর্ম মানবকল্যাণে সবচেয়ে কার্যকর, সবচেয়ে অগ্রগামী।
নোট : শেষ করছি সূরা আল হাশরের ২৪ নম্বর আয়াত দিয়ে- ‘তিনিই আল্লাহ, স্রষ্টা, উদ্ভাবক, রূপদাতা, উত্তম নামসমূহ তাঁরই। নভোমণ্ডলে ও ভূমণ্ডলে যা কিছু আছে, সবই তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা করে। তিনি পরাক্রান্ত প্রজ্ঞাময়।’

লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, সাপ্তাহিক শেরপুর

::আয়োজন::

বন্ধুঘরের ১ম সাহিত্যসভা

বন্ধুঘর আয়োজিত ১ম সাহিত্যসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ডিসেম্বরের এক শীত সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হয় সাহিত্যসভা। এতে বন্ধুদের স্বরচিত লেখা পাঠ, অনুভূতি প্রকাশ ও অতিথিদের লেখালেখি বিষয়ে দিকনির্দেশনা ছিল সাহিত্যসভার মূল আকর্ষণ। অনুষ্ঠানে অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেনÑ ব্যাংককর্মী কবি খাইরুল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম মাস্টার ও ডাক্তার সেলিম।
অনুষ্ঠানে ঘরকুটুমের ১ম সখ্যার মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
আলোচনায় অতিথিরা বলেন, ঘরকুটুম এবং সাহিত্যসভা আমাদের গ্রামের ছেলেমেয়েদের লেখালেখি ও সাহিত্য চর্চায় অবদান রাখবে। তারা এর হাত ধরেই সুন্দর আগামী গড়ার দিক নির্দেশনা পাবে। সাহিত্য চর্চা ও মানব উন্নতির জন্য এধরনের সভা খুবই উপকারী। বক্তরা ঘরকুটুমের প্রকাশনা যেন অব্যাহত রাখা হয় এ জন্য জোর দাবি জানান। সেই সঙ্গে এর সার্বিক সহযোগী হওয়ার আশা ব্যক্ত করেন।
-সোহানুর রহমান সোহাগ


::কবিতা::

অবনত সমর্পণ
সাইফ সিরাজ

আমার কাতর চোখে জেগে থাকে অশেষ মিনতি
আর্ত কামনায় আমি তুলে ধরি আমার দু’হাত
নামে লোনা-জল-স্রোত খোলে রুদ্ধ মানস কপাট
আত্মার আশ্রয়ে চুপ কাঁদে সব গোপন অতীতÑ

শব্দহীন আর্তনাদে চেয়ে যাই তোমার দরদ
কেঁপে ওঠে দেহ-ঘর সুতীব্র ভয়ের শিহরণে
অগণিত বিশেষণে ডেকে চলি অনিন্দ্য তোমায়
আমার হৃদয় ঘরে পাঠাও তোমার ছায়া-সুখ।

অসীম ভ্রান্তিতে আমি সসীম নিবেদনে তোমায়
দিয়ে যাই আরাধনা গভীর প্রেমের অনুরাগে
সত্ত্বার সমগ্র অনু তোমার মগ্নতায় বিমূঢ়
খোলে দাও তুমি আজ খাজানা দরোজার খিল

কত আর প্রতীক্ষার পরীক্ষায় কাঁদাবে আমায়
ক্ষুদ্র আমার অন্দরে আদি-অন্তহীন তুমি যদি
ঢেলে দাও অনুরাগ; নির্ভিক আমি তোমার পথে
হেঁটে যাবো সংশয়হীন। দাও সে প্রেমের আলিঙ্গন।


অনাহার
মোরাদ খান

বুকের হাড়গুলো দেখে বুঝা যায়
হাত পা শুকিয়ে, বাঁশের কঞ্চির মত হয়ে গেছে
দেখে মনে হয় মাসের পর মাস
কেটেছে অনাহারে।
সে এখন অন্ন চায়
স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, পতাকা সে চায় না
সে শুধু আহার চায়
আহার...
তাই তো সেদিন রফিক আজাদ
ব্যথিত হৃদয়ে বলেছিলÑ
ভাত দে হারামজাদা নইলে মানচিত্র খাব।
সে জানতÑ গণতন্ত্র, স্বাধীনতা সে তো অনেক আগেই
রাজকীয় খাবারে পরিণত
এখন তার সঙ্গে নতুন করে যোগ হয়েছে
পতাকা আর মানচিত্র।
রাজাদের উচ্ছৃষ্ট খাবারগুলো
তার পোষা কুত্তারা খায়
অনাহারী সে অনাহারে দিন কাটায়
বাঙালি সে এখন কাঙালি
সে শুধু চায় খাবার
সে শুধু চায় তার বেঁচে থাকার অধিকার।

::সাহিত্য::

সোনালি কাবিনের চারদশক পূর্তি
মহিম মাহফুজ

‘আমার মায়ের সোনার নোলক হারিয়ে গেল শেষে
হেথায় খুঁজি হোথায় খুঁজি সারা বাংলাদেশে।’ অথবা
‘বধূবরণের নামে দাঁড়িয়েছে মহামাতৃকুল
গাঙের ঢেউয়ের মতো বলো কন্যা কবুল কবুল’

এমন অসংখ্য কালজয়ী কবিতার জনক ও সমকালিন বাংলাসাহিত্যের প্রধানতম কবি আল মাহমুদ। ১৯৩৬ সালে, ১১ জুলাই ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার মৌড়াইল গ্রামের মোল্লাবাড়িতে এক ব্যবসায়ী ও সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম তার। বাংলাদেশ, স্বাধীনতা, বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে ইতিহাসের সমান্তরালে আল মাহমুদ নিজেকে নিয়ে আসতে পেরেছেন।
একুশ শতকের দ্বিতীয় দশকে এসে আল মাহমুদের কোনো সমকক্ষ নেই। উভয় বাংলার তিনি শ্রেষ্ঠ কবি। নিজেকে ‘জর্জরিত মানবাত্মার সর্বশেষ বিশ্বাসের স্তম্ভ’ দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমি একজন মুমিন কবি। কবি ছাড়া আর কিছু নই।’ ১৯৬৮ সালে তিনি বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন এবং ১৯৮৬ সালে কবিতায় রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ পুরস্কার একুশে পদকে ভূষিত হন।
আল মাহমুদের সুবিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ ‘সোনালি কাবিন’। রচনাকাল ১৯৬৯ থেকে ৭৩। ইতোমধ্যে যা বাংলাসাহিত্যের ক্লাসিক কাব্যে পরিণত হয়েছে। ‘সোনালি কাবিন’ এর অন্যতম সম্পদ ব্যবহৃত শব্দসম্ভার। তৎসম-তদ্ভব শব্দের সঙ্গে লোকজ এবং মুসলিম জবানের অন্তরঙ্গ শব্দরাজির সহাবস্থান ঘটেছে এখানে। কৃষিজীবী মুসলমান সমাজের একান্ত  ঘরোয়া মুখের ভাষা থেকে এ শব্দসমূহ আহহৃত। তবে সাহিত্যের গবেষকগণ এখানে পুঁথিসাহিত্যের বিস্তৃত সৌরভ সহজেই শুঁকতে পারবেন। উল্লেখযোগ্য শব্দবন্ধ হলোÑ কথার খেলাপ, জবান নাপাক, নাদানের রোজগার, আমিষের নলা এবং তালাক, কসুর, বান, লানৎ, সবক, কবুল, গতর ইত্যাদি।  চিত্তাকর্ষক ঘটনা হলো সনেটগুচ্ছের শেষ অংশে লোকজ ইসলামি শব্দগুলোর উপস্থিতি। সোনালি কাবিন-এ নাস্তিক্যের জয়গান গাওয়া হলেও উচ্চারণ ভঙ্গিতে, কোথাও কোথাও স্পষ্টত কুরআনের বাকভঙ্গি ব্যবহৃত হয়েছে। ঞযব এড়ষফবহ কধনরহ নামে সোনালি কাবিনের ইংরেজি ভার্সন প্রকাশিত হয়েছে। ২০১০ সালে আমেরিকার ও-চজঙঈখঅওগ চজঊঝঝ থেকে প্রকাশিত অনুবাদগ্রন্থটি স্বাভাবিকভাবেই বিশ্বপাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এবং বিশ্বসাহিত্যে আল মাহমুদের স্থায়ী আসনটি মজবুত করে।
কবিতা রচিত হয় একটি সময়ের ছায়ায় বসে। তবে স্বার্থক কবিতা কখনো সময়কে অনতিক্রম্য ভাবে না। নিজের সময়কে অতিক্রম করে ডানা মেলে উড়াল দিতে চায় অনন্তকালের মহাকাশে। এর প্রকৃষ্ঠ উদাহরণ কাজী নজরুল ইসলামের ‘বিদ্রোহী’ কবিতা। যা সমকালকে অতিক্রম করে এসে দাঁড়িয়েছে মহাকালের অসীম প্রান্তরে। আল মাহমুদের ‘সোনালি কাবিন’ও তাই কালের সাক্ষ নিয়ে হয়ে উঠেছে চিরন্তন। বিদ্রোহী কবিতার আবেদন যেমন কোনোদিন ফুরিয়ে যাবার নয়। নিষ্পেষিত মানবতার মুক্তির শপথ হয়ে জেগে থাকবে। সোনালি কাবিন এর অনিবার্যতাও কখনো ম্লান হবার নয়। মানব-মানবীর চিরায়ত প্রেম-প্রণয়, জীবনের জয়-পরাজয় আর স্বার্থক কবিতার উজ্জ্বল স্মারক হয়ে ভেসে থাকবে অনন্তকালের প্রেক্ষাপটে। সম্প্রতি রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো  ‘বিদ্রোহী’ কতিার ৯০ বছর পূর্তি উৎসব। এটি নিঃসন্দেহে আনন্দের। রাষ্ট্র, শিল্পীসমাজ ও বিশ্বপাঠকের কাছে অগণিত মানুষের দাবি, সোনালি কাবিনকে যথাযথ মূল্যায়ন করতে এর চারদশক পূর্তি উৎসবের আয়োজন করা হোক।


::সমাজ::

বন পাহারাদার খুরশিদার বিশ্বজ
মুস্তায়িন সাবিত

বিশল বন। চারদিকে সবুজের সমারোহ। সারি সারি গর্জন গাছগুলো বাতাসে যেন নৃত্য করে। এমনই দৃশ্য টেকনাফ নেচার পার্কের। একটা সময়ে এই বনে মানুষের হাঁটাচলা তেমন ছিল না। যখন-তখন বন্য প্রাণীরা আক্রমণ করত। ছয়-সাত বছর আগেও এই বনে চোরেরা ঢুকে মূল্যবান গাছ কেটে নিয়ে যেত। শিকার করত হরিণসহ নানা পশুপাখি। একজনের উদ্যোগে হঠাৎ কমে গেল চোরের উপদ্রব। দিন-রাত পাহারা দিয়ে তিনি ও তার দল বন রক্ষা করে চলেছেন। সম্প্রতি টেকনাফের  কেরোনতলী গ্রামের খুরশিদা বেগম বিনা  বেতনে কঠোর পরিশ্রম করে বন বিভাগের বিশাল সংরক্ষিত বনাঞ্চল রক্ষা, বন্যপ্রাণীসহ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং পরিবেশ রক্ষায় বিশেষ ভূমিকা রাখার জন্য ওয়াংগারি মাথাই পুরস্কার অর্জন করেছেন। এবার শোনা যাক খুরশিদার সফলতার গল্পটা।
বনাঞ্চলঘেরা কেরোনতলী গ্রামে শত শত ছেলেমেয়ে লেখাপড়া করত না। পাহাড়-জঙ্গল থেকে জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করে তারা সংসারের জন্য বাড়তি আয় করত। লেখাপড়া করবে কোথায়? স্কুলই যে ছিল না। সে সময় খুরশিদা বেগম ভাবলেন, একটা স্কুল প্রতিষ্ঠা করা যায় কি না। স্বামী মুহাম্মদ ইসলামের সঙ্গে পরামর্শ করেন। বৈঠক করেন গ্রামবাসীর সঙ্গেও। তাতে অবশ্য তেমন লাভ হলো না। কেননা, গ্রামের বেশির ভাগ জমি বন বিভাগের আওতাধীন। তবুও হাল ছাড়লেন না খুরশিদা। তিনি বলেনÑ ‘টেকনাফ সদরে গিয়ে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছি। হঠাৎ বাবা মারা গেলেন। অভাবের কারণে আর পড়তে পারিনি। তাই ইচ্ছা ছিল গ্রামের অন্যরা যেন ঠিকমতো লেখাপড়া শিখতে পারে।’
নিজের স্বপ্নকে পূরণ করতে ২০০৪ সালে আইপ্যাক কর্তৃক পরিচালিত টেকনাফ নিসর্গ বনরক্ষা সহব্যবস্থাপনা কমিটিতে সদস্য হিসেবে যোগ দেন। তারপর পাশের পাঁচ হাজার একরের বেশি সংরক্ষিত বন পাহারার জন্য কেরোনতলীর গ্রামের ২৮ জন নারীকে নিয়ে গঠন করেন ‘কেরোনতলী মহিলা বন পাহারা দল’। খুরশিদা নির্বাচিত হন দলের সভাপতি। তারপর বন বিভাগের সহযোগিতায় বাঁশের বেড়া ও গোলপাতার ছাউনি দিয়ে সে বছরই  তৈরি হলো ‘কেরোনতলী বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’। খুরশিদা ও তার স্বামী ছেলেমেয়েদের বিদ্যালয়ে পড়াতেন। ২০১০ সালে স্বামীর মৃত্যু হলে বিদ্যালয়টির হাল ধরেন খুরশিদা। এখনো তিনি এই বিদ্যালয়ে বিনা বেতনে শিক্ষকতা করছেন। বর্তমানে এই বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী প্রায় ৩০০। খুরশিদার দুই সন্তান সাইফুল ইসলাম ও মুহাম্মদ এরশাদ।
২০১১ সালের এপ্রিলে অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে টেকনাফ সদর ইউপির ৯ নম্বর ওয়ার্ড থেকে তাকে মেম্বার পদে প্রার্থী করা হয়। চারজন পুরুষ প্রতিদ্বন্দ্বীকে হারিয়ে নির্বাচনে বিপুল ভোটে খুরশিদা ইউপির সদস্য নির্বাচিত হন। এখন আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়ে খুরশিদা বাংলাদেশকে বিশ্বের কাছে নতুন করে তুলে ধরেছেন।
খুরশিদা আমাদের সমাজের মডেল। একজন গর্ব। আমরাও চেষ্টা করলে এমন কিছু কাজ করতে পারি। যা সমাজের জন্য উদাহরণ হয়ে দাঁড়ায়। এলাকার সমস্যা নিরসন হয়।


::মানবতা::

আসুন শীতার্তের পাশে দাঁড়াই
এমদাদুল হক তাসনিম

হাড়কাঁপা শীত। জবুথবু মানুষ। ঘন কুয়াশা। কুয়াশার চাঁদরে ঢাকা আকাশ। বইছে শৈত প্রবাহ। হিমেল হাওয়া। সূর্য ঢাকা কুয়াশার আবরণে। আলোর দেখা মিলে না সারাদিনও। কোথাও এ অবস্থায় কেটে যায় কয়েকদিন। কোনোখানে আরো ভিন্ন।
জেঁকে বসেছে শীত। দিন দিন তা বেড়েই চলছে। বৃষ্টির মতো পড়ছে কুয়াশা। বিঘিœত হচ্ছে জনজীবন-কাজকর্ম। দুর্ভোগ বাড়ছে মানুষের। এরই মধ্যে শোনা যাচ্ছে মৃত্যুর সংবাদ। পত্রিকায় তা নিয়মিত শিরোনাম হচ্ছে। এখন এমন সংবাদ পাওয়া যাবে প্রতিনিয়ত। কখনো থাকবে একাধিক মৃত্যুর খবর। এটা সত্যিই আমাদের ভাবায়। মর্মাহত করে। শীতে মানুষের কষ্ট অনেকাংশে বেড়ে যায়। বিশেষত উত্তরাঞ্চলে তা প্রকট আকার ধারণ করে। এ অঞ্চলে শীত বেশি। মানুষও দরিদ্র্য। অর্থাভাবে পারে না শীতবস্ত্র কিনতে। দেশের বিভিন্ন এলাকাতেই এমন লোকসংখ্যা রয়েছে প্রচুর।
আমরা যারা অবস্থাসম্পন্ন, আর্থিক স্বচ্ছলতা আছেÑ আমাদের দায়িত্ব শীতার্ত অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো। তাদের সেবা সহযোগিতা করা। শীতবস্ত্র প্রদানে তাদের কষ্ট লাঘবের চেষ্টা করা। কনকনে এ শীতে তারাও একটু উষ্ণ আরাম চায়। তাই এটা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব ও মানবিক মূল্যবোধ থেকেই করা উচিত।

::শিক্ষা::

জ্ঞানের সমুদ্র পাঠাগার
মুহাম্মদ হাবীব উল্লাহ

জ্ঞানচর্চা ও বিকাশের ক্ষেত্রে পাঠাগারের তুলনা হয় না। আর এই পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করা ইসলামি সভ্যতারও একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। মূলত ধর্মীয় নির্দেশনার কারণেই মুসলমানরা পাঠাগার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জ্ঞানচর্চায় আগ্রহী হয়ে ওঠে। মুসলমানদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কুরআন। আর কুরআনের প্রথম নাজিলকৃত শব্দ ইকরা। এর অর্থই হলো পড়ো। অন্যদিকে হজরত রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর ওপর ফরজ।’
জ্ঞানচর্চার প্রতি ইসলামের এই অবস্থানের কারণেই মধ্যযুগে যখন গোটা ইউরোপ অজ্ঞতার অন্ধকারে ডুবে ছিল, তখন মধ্যপ্রাচ্য, স্পেন, উত্তর আফ্রিকা, গ্রানাডা ও কর্ডোভাসহ মুসলিম দুনিয়ার প্রায় সর্বত্র পাঠাগার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জ্ঞানচর্চার প্রতিযোগিতা দারুণভাবে লক্ষ্য করা যায়।
অষ্টম শতাব্দীতে বাগদাদের উমাইয়া ও আব্বাসীয় খলিফারা দারুল হিকমা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে প্লেটো, এরিস্টটল প্রমুখ বিশ্বখ্যাত মনীষীর গ্রন্থাবলি গ্রিক ভাষা থেকে আরবি এবং পরবর্তী সময়ে লাতিন ভাষায় অনুবাদ করেন। এর মাধ্যমে মুসলমানরা ইউরোপের জ্ঞান-বিজ্ঞানকে সংরক্ষণ করেছে। শুধু গ্রিক ও ইউরোপই নয়, প্রাচীন ভারতবর্ষে ইসলামের আগমনের আগে প্রচলিত শিক্ষা, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও দর্শনেরও সংরক্ষণ করেছে মুসলমানরা এই পাঠাগারের মাধ্যমেই।
মুসলমানদের মধ্যে পাঠাগারের আদি প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে যার নাম সবার আগে চলে আসে তিনি হলেন খালিদ। তিনি গ্রিক বিজ্ঞান, বিশেষ করে রসায়ন এবং চিকিৎসা বিদ্যা অধ্যয়নের ব্যাপারে উৎসাহী হয়ে ওঠেছিলেন। ইতিহাস থেকে জানা যায়, প্রিন্স খালিদ এসব বিষয়ে গ্রিক বই অনুবাদ করে নিজের গ্রন্থাগার সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে স্টিফেন নামের একজন অনুবাদকও নিয়োগ করেন।
ইসলামি শাসনামলে মুসলিম বিশ্বে তিনটি খ্যাতিমান জ্ঞানচর্চা কেন্দ্রের একটি হলো মিসরের রাজধানী কায়রো। সেখানকার অসংখ্য পাঠাগারের একটি হলো বায়তুল হিকমা। ৯৮৮ সালে ফাতেমি খলিফা আল আজিজ এটি প্রতিষ্ঠা করেন। এই পাঠাগারে এক লাখ বই ছিল। এর মধ্যে অন্তত ছয় লাখ বাঁধাই করা বইসহ দুই হাজার ৪০০ কুরআন শরিফ ছিল। আর ইউরোপে যখন কোনো স্কুল ছিল না তখন স্পেনের মুসলমানরা জ্ঞানচর্চার জন্য যে অগণিত বই ব্যবহার করত তার নামের তালিকাটিই ছিল ৪৪ খণ্ডে বিভক্ত!
ইতিহাস থেকে আরও জানা যায়, হালাকু খান বাগদাদ দখল করে ‘দারুল হিকমা’তে আগুন ধরিয়ে দিলে মানব ইতিহাসের সবচেয়ে বড় পাঠাগারটি পুড়ে ছাই হয়ে যায়। সেই ছাই দজলা নদীতে নিক্ষেপ করা হলে দীর্ঘ ছয় মাস দজলা নদীর পানি কালো রঙ ধারণ করে।
এসব তথ্য-প্রমাণের মাধ্যমে একটা জিনিস পরিষ্কার, ধর্মীয় বাধ্যবাধকতার কারণে মুসলমানরা জ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে যে ধারার সূত্রপাত করেছিল তা-ই তাদের দুনিয়ার নেতৃত্বে অধিষ্ঠিত রেখেছিল। কিন্তু তারা যখন জ্ঞানচর্চা ছেড়ে দিয়ে মূর্খতাকে গ্রহণ করেছিল তখন তাদের ওপর নেমে এসেছিল নানা রকম জুলুম, নির্যাতন আর লাঞ্ছনা। সুতরাং পাঠাগার গড়ার ক্ষেত্রে অতীতের মুসলমানরা যে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করে গেছে, নিজেদের স্বার্থেই তার ধারাবাহিকতা রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। আমরা একটু কষ্ট করলেই আমাদের আশপাশে বা মসজিদকে কেন্দ্র করে চমৎকার সব পাঠাগার গড়ে তুলতে পারি; পারি জ্ঞানের আলোয় সমাজকে আলোকিত করতে।


::ছোটগল্প::

মায়ের জন্য যুদ্ধ
মাহমুদুর রহমান সুজয়

আজ খুব বৃষ্টি হলো। আমার জীবনে এত বৃষ্টি দেখি নি। রেডিওর ব্যাটারিও শেষ, দোকানে যেতে হবে। ব্যাটারি কিনতে।
এসব কথা ভাবছিল মাসুদ রানা। একজন সুঠাম দেহের অধিকারী, মাথা ভর্তি চুল, বয়স ২৬ এর কাছাকাছি। রেডিওর কোনো অনুষ্ঠান শোনা বাদ দেয় না। তাই সপ্তাহে দুটা করে ব্যাটারি বদলাতে হয়। আজও তার ব্যাটারি শেষ। কিন্তু কিছুক্ষন পরে খবর শুরু হবে। খবর না শুনলে রাতে তার ঘুম হয় না। তাই বৃষ্টিতে সামান্য ভিজেই দোকানে গেল ব্যাটারি আনতে।
ব্যাটরি নিয়ে বাসায় এসে দেখে জানালা খোলা, বৃষ্টির পানি এসে মেঝে ভিজে গেছে। তারাতারি জানালা লাগিয়ে বসে পরলেন খবর শুনতে। খবরে বলা হচ্ছে ঢাকা শহর খুব উত্তপ্ত, ছাত্ররা আন্দোলন করছে পশ্চিম পাকিস্থানের বিরুদ্ধে। মাসুদ ভেবে পায় না এত আন্দোলনের কি হলো। খালি একবার হাই তোলে বললো- হায়রে দেশ, সবাই আন্দোলন আন্দোলন করে, আন্দলেন করে কি হবে?
সকালে ঘুম ভেঙ্গে মাসুদ দেখে বাইরে বৃষ্টি নেই। তারাতারি রেডি হয়ে বাজারে দোকান খুলতে যায়। রাস্তায় তার বন্ধু আরিফের সাথে দেখা। কি খবর আরিফ ঢাকা থেকে কবে আসলি? আরে মাসুদ তোর কাছেই যাচ্ছিলাম, বললো আরিফ। কেন কি মনে করে? না তেমন কিছু না সকাল দশটার খবর শুনতে হবে আর আমার রেডিওটা ঢাকায় রেখে এসেছি। ও আচ্ছা এখন তো দশটা বাজতে আরও ২০ মিনিট আছে, চল দোকানে গিয়ে খবর শুনি বললো মাসুদ। আচ্ছা আরিফ খবরে শুনি ঢাকায় এত গণ্ডগোল এর কারণ কি? কিসের এত আন্দোলন করছিস তোরা?
মাসুদ! তারা আমাদের রক্ত চুষে নিচ্ছে, তারা আমাদের ওপর রাজত্ব করতে চাচ্ছে। আমরা ভোটে জিতলাম তারপরও আমাদের তারা ক্ষমতা দিচ্ছে না।
তাহলে কি করবি আরিফ, বললো মাসুদ। প্রয়োজনে যুদ্ধ করবো তাদের সাথে।
এটা একটা কথা বললি? মুসলমান মুসলমান ভাই ভাই আর তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবি? বলে মাসুদ।
মাসুদ একটা কথা শুন! ভাই যখন ঘাড়ে উঠে তখনও সেটা মানা যায়, কিন্তু যখন সে ঘাড়ে উঠে মাথার চুল টানে তখন নামিয়ে দিতে হয়। আর আমরা সেটাই করবো। কথা বলতে বলতে বাজারে এসে পরলো ওরা।
এখানে মাসুদের ছোট একটি মনিহারি দোকান আছে। দোকান খোলে ঝাড়ু দিয়ে, রেডিও চালু করতেই দশটার খবর শুরু হলো। খবরে সেই একই কথাÑ ঢাকায় আন্দোলন চলছে। ছাত্ররা মিছিল করছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররা জমা হচ্ছে মিছিল করার জন্য। খবর শুনতে শুনতে মাসুদ বললো, আচ্ছা আরিফ তোরাকি পারবি এই দেশটাকে মুক্ত করতে। আরিফ বলে, অবশ্যই পারবো ৫২’র ভাষা আন্দোলনেও আমরা আমাদের অধিকার নিয়েছি। এবারও আমরা পাবরো। মাসুদ একটু উদাস হয়ে বলে, হুম তাই কর আমরা তো আর পারবো না, তোরা শিক্ষিত মানুষ তোরা যেটা ভালো সেটাই করবি।
মাসুদ সারাদিন ভাবে কি হচ্ছে দেশে। সবাই অধিকার নিয়ে ব্যস্ত, কিন্তু তারা কি নিজেদের অধিকার ফিরিয়ে আনতে পারবে?
এদিকে মাসুদের মা মাসুদকে বিয়ে করাবে এ নিয়ে উদ্বিঘœ। প্রতিদিনই পাত্রীর সন্ধান করে ঘুরছেন। আগামীকাল রসুলপুর যাবে পাত্রী দেখতে। এ নিয়ে পাশের বাড়ির মানুষের সাথে নানা আলোচনায় সারাদিন ব্যস্ত হামিদা বানু। প্রাত্রী এই রকম, সেইরকম, ঘটক বলেছে। এসব আলোচনা করতে করতে পান চিবাচ্ছে, এই মুহূর্তে হামিদা বানুর মত সুখী মানুষ এই পৃথিবীতে কেউ নেই, যে কেউ তাকে দেখলে তাই ভাববে। তার স্বামী মারা গেছে গত দুই বছর আগে, রক্ত বমি করতে করতে একরাতে তিনি মারা যান। এরপর মাসুদই তার বাবার দোকান দেখা শোনা শুরু করে।
রাত সাতটায় আরিফ এল। তার সাথে আরও দুজন, মাসুদ তাদেরকে আগে দেখেনি। আরিফ মাসুদকে বললো- মাসুদ এরা আমার ঢাকার বন্ধু, ভার্সিটিতে বিশেষ গণ্ডগোলের জন্য তারা এখানে চলে এসেছে, পুলিশ যাকে পাচ্ছে তাকেই ধরে নিয়ে যাচ্ছে।
কেন, ধরছে কেন? মাসুদ খুব বিচলিত হয়ে বললো।
আরে মাসুদ এরা সবাই আন্দোলনের সাথে জড়িত। তাই পুলিশ এদের খুঁজছে। এই বলে আরিফ তার দুই বন্ধুর সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। একজনের নাম রাজু, আরেক জনের নাম কামাল। রাজুর বয়স ২২-২৪ বছরের মধ্যে হবে। খুব হেংলা, মনে হয়ে সামান্য বাতাসে উড়ে যাবে। আর কামাল একজন স্বাস্থ্যবান মানুষ, অনেক লম্বা। বয়স হবে হয়ত ২৫ এর কাছাকাছি। আপনারা বসুন, বললো মাসুদ। তারা সবাই বসে, এরই মধ্যে মাসুদের মা এসে পরে, কাল মাসুদের জন্য পাত্রী দেখতে যামু আরিফ। আরিফ বলেÑ কোন এলাকায় যাবেন খালা?
রসুলপুর, আলি শেখের মাইয়া। হুনসছ বাবা মাইয়াটা দেখতে বলে এহেবারে পরীর লাহান।
আপনি কিভাবে জানলেন মেয়ে পরীর মত দেখতে? আরিফ হেসে হেসে প্রশ্ন করে।
আরে বাবা আমি জানি না ঘটক কইলো। আচ্ছা এরা কারা আরিফ?
এরা আমার বন্ধু ঢাকা থেকে বেড়াতে এসেছে। ও আইচ্ছা ঠিক আছে আমি এহন নমজ পরমু। আচ্ছা খালা যান নামাজ পড়েন। আর খালা আপনি নামাজে একটু আমার মায়ের জন্য দোয়া করবেন?ঃ কেন আরিফ তুমার মায়ের কি অইচে?
ঃ না কিছু না মা আজ খুব অশান্ত, মায়ের সন্তানেরা আজ মায়ের সম্মান বাচাতে খুব ব্যস্ত।
ঃ তুমাগো কথা কিছু বুঝি না। শিক্ষিত মানুষের এই এক সমস্যাÑ তাগর কথা বুঝা যায় না। এই কথা বলতে বলতে মাসুদের মা চলে যায়।
মাসুদ তুই বিয়ে করতাছস আর কিছু জানাইলি না? আরিফ অভিমানের সুরে বলে।
আরে মা তো আমাকে পারলে প্রতিদিনই একটি করে বিয়ে করায়, এই বলে হা হা হা... করে হেসে দেয় মাসুদ। সাথে সাথে সবাই হসে, রাজু, কামালও হাসে, তারা এই মুহূর্তে ভুলে গেছে তারা এক বিশেষ সমস্যায়  আছে।
পরদিন মাসুদের মা রসুলপুর যায় পাত্রী দেখতে, হামিদা বানু পাত্রীর কথা যেরকম শুনেছিলেন, তার চেয়ে বেশি সুন্দর লাগছে। খুব সুন্দর চেহারা, চোখ দুটো বড় বড়, লম্বা চুল। কি যে সুন্দর লাগছে মেয়েটাকে। হামিদা বানু মনে মনে বললেন- এই মেয়েকেই মাসুদের বউ করবো।
বিকালে মাসুদ একা একা আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিল। আকাশে কেমন যেন একটি রিক্ত রিক্ত ভাব। কোনো মেঘ নেই, শুধু নীল। বাতাসে কেমন যেন উদাস উদাস একটা ভাবও আছে। মাসুদের মনটা হঠাৎ ছ্যাত করে ওঠে। সে বুঝতে পারে না তার এরকম কেন লাগছে। এসময় আরিফ আসে সাথে রাজুও আছে কিন্তু কামাল নেই। কি খবর আরিফ এত দেরি কেন আর কামাল ভাই কই?
ঃ কাল শেখ মুজিব ভাষণ দিবে। সে জন্য কামালকে ঢাকা পাঠালাম। এবার মনে হয় আমরা জিতে যাব।
কিসের ভাষণ হবে কি জিতবি ভাই, তোর কথা তো কিছুই বুঝতে পারছি না।
ঃ মাসুদ! আজ রাতে আমরাও ঢাকা যাব তুই যাবি আমোদের সাথে?
ঃ দেখি কি করি।

রাতে মাসুদ তাদের সাথে ঢাকা যায়। রেসর্কোস ময়দানের কাছাকাছি তারা রাত কাটায়। এরই মধ্যে তাদের সাথে ২০-২৫ জন ছাত্র যোগ দেয়। মাসুদের কাছে কেমন যেন বিষয়টি এডভ্যাঞ্জার মনে হয়। খুব মজা পায় মাসুদ।
সকাল হলো, হাজার হাজার মানুষ কোথা থেকে যেন আসতে শুরু করলো। মাঠটি কানায় কানায় ভরে গেল। এরই মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভাষণ শুরু করলেন।
মাসুদ অবাক হয়ে ভাষণ শুনতে থাকলো। সে ভাবলো একটি মানুষ কিভাবে এমন সুন্দর কথা বলে। মাসুদের মনে শুধু একটি কথা বাজতে থাকলোÑ এবারের সংগ্রাম আমদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম। কোনোভাবেই সে এই কথাটি মাথা থেকে বের করতে পারছিলো না। আস্তে আস্তে যেন আওয়াজটি তার কানে জোরে জোরে বাজতে থাকলো। সে একটি নেশার মধ্যে পরে গেল। মাসুদ ভাবলো এই দেশ না থাকলে আমার থেকে লাভ কি।
ভাষণ শেষ হলো, আরিফ মাসুদকে জিজ্ঞেস করে। মাসুদ তুই কি এখন চলে যাবি? আমাদের একটু কাজ আছে। মাসুদ ভাঙা কণ্ঠে বলে, আচ্ছা আরিফ যাদের লেখাপড়া নেই তারা কি তোদের সাথে দেশের জন্য কিছু করতে পারবে? এই কথা বলতেই আরিফ মাসুদকে জড়িয়ে ধরে ফেললো। মাসুদ আবেগ ধরে রাখতে পারলো না, সে কেঁদে ফেললো।
আজ রাতে মিটিং আছে সবার সাথে সেখানে দেখা হবে। এই বলে আরিফ রাজু এবং মাসুদকে নিয়ে চলে গেল।
রাত ১২ টা কিংবা তার ওপরে বাজে। সাবাই একটি ঘরে বসে আছে। এদিকে শহরের অবস্থা খুব খারাপ। সারা শহরে পুলিশ গিজগিজ করছে। এর মধ্যে সবাই যে কিভাবে এলো ভেবে পায় না মাসুদ।
কথা শুরু হলো। আরিফ কথা বলছে, আজ আমরা যুদ্ধ করার সনদ পেয়ে গেছি। যুদ্ধ শুরু হয়ে গিয়েছে। আমরা তো বেশি কিছু চাইনিÑ শুধু চেয়েছিলাম আমাদের অধিকার, কিন্তু তারা আমাদের সেটাও দিবে না। তারা আমাদের রক্তে মজা পেয়েছে। কিন্তু আমরা তা মানি না, আমরা জীবন দিতে প্রস্তুত কিন্তু দেশের ইজ্জত দিব না। আমরা সবসময় নির্যাতিত হয়েছি, কিন্তু আমাদের পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গিয়েছে এখন আমরা হয়ত  মারবো না হয় মরবো।
কথা বলে যাচ্ছিলো আরিফ, মাসুদ খুব মনযোগ দিয়ে শুনছিলো। মাসুদ সব ভুলে গিয়ে মনে মনে সিদ্ধান্ত নিল আমিও দেশের জন্য কিছু একটা করবো।
এদিকে যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। আরিফ, রাজু, মাসুদ সাথে কামালও এসে পরেছে। তারা সবাই এক হয়ে গ্রামে চলে এল। গ্রামে রাতে একটি মিটিং ডাকল আরিফ। সেখানে গ্রামের প্রায় সব যুবক এলো। আরিফ দেশের এই পরিস্থিতির কথা তুলে ধরলো। যুদ্ধ শুরু হয়ে  গেছে সেই কথাও বললো। প্রায় যুবকই যুদ্ধে যাবে বললো। আরিফ বললো, আমরা আমাদের গ্রামেই প্রশিক্ষণ নেব। আমি কাল ঢাকা গিয়ে সেক্টর কমান্ডারের সাথে কথা বলবো। পরদিন আরিফ ঢাকা গিয়ে কমান্ডারের সাথে কথা বললে কমান্ডার তাকে একজন প্রশিক্ষক দেন এবং পরে এসে অস্ত্র নিয়ে যেতে বলেন। প্রশিক্ষকের নাম সামিউল ইসলাম। আর্মিতে কাজ করতেন কিন্তু যুদ্ধ চলছে বলে তিনি মুক্তিযুদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন।
আরিফ গ্রামে প্রশিক্ষক নিয়ে এসেছেন এই খবর যুবকদের কাছে পৌঁছে গেল। আরিফ প্রশিক্ষকের সাথে তাদের পরিচয় করিয়ে দিলেন। আর কাল থেকে প্রশিক্ষণ শুরু হবে বলে জানিয়ে দিলেন।
এদিকে মাসুদের মা, মাসুদকে বিয়ে করাবে বলে পাগল হয়ে গেছেন। মাসুদ যতই বলে দেশের পরিস্থিতি ভালো না এখন বিয়ে করা সম্ভব নাÑ তার মা ততই বলে, দেশের সাথে তর বিয়ার সম্পর্ক কি। এরকম মাইয়া ১৪ গ্রামে খুঁজলে আর পাইব না। মাসুদ কথা কানে না নিয়ে ভাবেÑ আজ বিকালে ট্রেনিং, কিন্তু বাজারে দোকানও খুলতে হবে, কি করা যায়। ভেবে ভেবে বলে, দেশের চেয়ে আমার দোকান বড় নয়।
বিকালে ট্রেনিং শুরু হলো, সবাই খুব উৎসাহের সাথে ট্রেনিং করলো। সামনের সপ্তাহে গুলি করা শিখানো হবে, শুনে সবাই আরও একসাইটেট হলো। খুব সুন্দরভাবে ট্রেনিং কার্যক্রম শেষ হওয়ার পর একেক জনকে একেক সেক্টরে পাঠানো হলো। মাসুদ আর রাজু এক সেক্টরে পরলো। আরিফ আর কামাল আরেক সেক্টরে। কারো সাথে কারো দেখা হবে না এই ভেবে অনেক কষ্ট হলো সবার। আরিফ মাসুদকে বলে, মাসুদ জীবনে আর দেখা নাও হতে পারে। সবসময় মনে রাখবি এই দেশের এখন সব দায়িত্ব তোর কাছে। তোর হাতে এই দেশের ভবিষ্যৎ লুকিয়ে আছে। নিজের দিকে খেয়াল রাখিস। এই বলে আরিফ বাসে করে চলে গেল। আরেক দিকে মাসুদ বাড়ি থেকে মায়ের কাছে বিদায় নিচ্ছিলো, কিন্তু মাসুদের মা তাকে বিদায় দিবে না। সে বলে। বাবা আমি তোকে বিয়ে করাইতে চাইলাম আর তুই যাবি যুদ্ধে? আমি তরে যাইবার দিমু না। তুই বাবা যাইস না। আমি একলা একলা এই বাড়িতে থাকবার পারমু না।
মাসুদ তখন তার মাকে বলে, মা শুন! তুমি যেমন অসুস্থ হলে আমি তোমাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাই, তোমার কিছু হলে যেমন আমি পাগল হয়ে যাই, ঠিক তেমন এই দেশও একজন মা আর এই মায়ের জন্যই আমি যুদ্ধে যাব। মা তুমি শুধু দোয়া করো, আমি যেন এই মাকে বাঁচাতে পারি। মাসুদ তার মার উত্তরের আশায় না দাঁড়িয়ে চোখে পানি নিয়ে বেরিয়ে পরলো।

দেশ স্বাধীন হলো, মাসুদ যুদ্ধ থেকে বাড়ি গিয়ে দেখলো তার বাড়ি আর নেই। পুড়ে দিয়েছে হানাদারেরা। যুদ্ধে মারা গেছে আরিফ, রাজু। কামালও এক পা হারিয়ে এখন পঙ্গু। এরপর একসময় মাসুদের বাড়ির জায়গা রাজাকারেরা নিয়ে নেয়। বাজারের দোকান পুড়িয়ে দিয়েছে অনেক আগে।
আজ অনেক দিন পর যখন ৪১ বছর পার হয়ে গেছে তখন মাসুদ ঢাকার রাস্তায় ভিক্ষা করে। মাসুদকে একবার একজন মুক্তিযুদ্ধা ভাতার ব্যবস্থা করে দিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু মাসুদ তা নেয়নি। সে বলেÑ আমি আর আমার বন্ধু এই ভাতার জন্য যুদ্ধ করি নি। আমরা যুদ্ধ করেছিলাম মায়ের জন্য। মায়ের সম্মান বাঁচিয়ে টাকা নেই না। লোকটি কথা শুনে বললো, ফকিরের বাচ্চার আবার বড় বড় কথা।

কিন্তু আজও সে নিজের কাছে গর্বিত। নিজেকে অনেক বড় মনে করে মাসুদ। ভাবে আমি যদি যুদ্ধ না করতাম তাহলে তোমরা এই গাড়ি বাড়ি করতে পারতে না। এটা ভেবেই সে প্রতিদিন ঘুমায়। কিন্তু আজ তার কাছে আর সেই রেডিওটি নেই। তাই ব্যাটারিরও চিন্তা নেই। সে আর খবর শুনে না, শুনে না ঢাকার অবস্থা উত্তপ্ত।
মাসুদ আজও সেই রেসকোর্স ময়দানের পাশে শুয়ে থাকে, ভাবে আবার একদিন বঙ্গবন্ধু হয়ত বলবেন এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম।

::ছড়া::

ফেব্রুয়ারি এলে পড়ে
ডা. শামীম খান

ফেব্রুয়ারি এলে পড়ে
শিমুল ফোটে গাছে
সেই শিমুলের সারা গায়ে
রক্ত মাখা আছে।
ফেব্রুয়ারি এলে পড়ে
লাল জবারা দোলে
সেই জবাতে শহীদি রক্ত
জমাট বেঁধে থাকে।
ফেব্রুয়ারি এলে পড়ে
পলাশ ফোটে বনে
ঠিক তখনি ভাষার কথা
পড়ে আমার মনে।

ফেব্র“য়ারি এলে পড়ে
বসন্তও সাথে রয়
ফুল পাখিরা মিলে সবাই
একুশের কথা কয়।
ফেব্রুয়ারি এলে পড়ে
ভাবি যখন একা
শিমুল জবা পলাশে দেখি
রফিক শফিক সালাম বরকত
জব্বারের নাম লেখা।

ফেব্রুয়ারি এলে পড়ে
বাহান্নর কথা হয় স্মরণ
তাজা রক্ত রাস্তায় ঢেলে
হয়েছে যাদের মরণ।
মরেও তারা মরেনি আজ
হয়েছে মরণজয়ী
রক্ত দিয়ে লিখেছে তারা
একুশে ফেব্রুয়ারি।

কুপোকাত
শাহীন শিমুল

টাইগারদের কারিশমা
দেখল ক্রিকেট বিশ্ব
পরাজয় করল বরণ
গ্যারি সোবার্সের শিষ্য।

নাসির তামিম মাহমুদুল্লাহ
মারল শত ছক্কা
স্যামি পোলার্ড গেইলদের
হলো না শেষ রক্ষা।

টাইগাররা করল দেখো
মস্ত বাজিমাত
তাইতো এবার ক্যারিবিয়রা
হলো কুপোকাত।


চাঁদ-তারা
এ এইচ এম ফারুক

অনেকগুলো তারার মাঝে
একটি রঙিন চাঁদ
চাঁদের বুকে আছে আমার
জীবন মরণ সাদ।

তারাগুলো ঝুলছে দেখো
দূর আকাশের বুকে
চাঁদটি আছে এই হৃদয়ে
আমার দিকে ঝুকে।

তারাগুলো ঝলমলিয়ে
জ্বলছে জোনাক অমন
চাঁদটি আলো করছে বিশ্ব
মানিক রতন যেমন।

শান্তি চাই
আতিকুল ইসলাম

শান্তি চাই শান্তি চাই
কিন্তু দেশে শান্তি নাই
শান্তির খোঁজে আমরা বলো
কোন দেশে আজ যাই।

সন্ত্রাস আর চাঁদাবাজে
যাচ্ছে ভরে দেশ
আম জনতা দুর্ভোগে সব
নাই শান্তির লেশ।

হরতাল আর মিছিল করে
আগুন জ্বালায় বাসে
মালিকরা তো কেঁদেই মরে
রাষ্ট্র পুরাই হাসে।
দেশের এমন বেহাল দশায়
আমরা কোথায় যাই
শান্তি নামের সুখ পাখিটা
বলো কোথায় পাই।


ভেজাল
অমারজিয়া নুপুর

ভেজাল ভেজাল হায়রে ভেজাল দেশে
ভেজাল কাজে যাচ্ছে সবই ভেসে
ভেজাল জিনিস তৈরি করে যারা
দেশ ও জন-গণের শত্র“ তারা।

ভেজাল যদি থাকে সারা দেশে
কাজে কর্মে মানুষ যাবে ফেঁসে
সবাই মিলে একসাথে পণ করি
ভেজালমুক্ত একটি সমাজ গড়ি।

বড় হতে চাই
মুহা. ইসমাইল হোসেন

একসাথে খেলি আর
এক সাথে চলি
এক পথে হেঁটে হেঁটে
সেই কথা বলি।

যা পাই একসাথে
ভাগ করে খাই
এক সাথে হেসে খেলে
দিনটা কাটাই।

সুখে দুখে হাসি হাসি
রাখি কাঁধে কাঁধ
কক্ষনো করি নাকো
ঝগড়া বিবাদ।

আমরা সবাই এক
যেন ভাই ভাই
পড়া লেখা করে সবে
বড় হতে চাই।

প্রিয় বাংলাদেশ
মনিকা ইয়াসমিন

লাখ শহীদের রক্তে গড়া
সবুজ শ্যামল মাঠে ভরা
আমার প্রিয় বাংলাদেশ
জীবন আমার ধন্য হল
তারই ছোঁয়ায় প্রাণ জুড়াল
রূপে যে তার নেইকো শেষ
আমার প্রিয় বাংলাদেশ।

ঘুষ
মুহা. খায়রুল ইসলাম

কাজ নাই কি করি
করতে চাই চাকরি
চায় তার ঘুষ যে
থাকে না তো হুঁশ যে।

ঘুষে দেশ ভরছে
গাড়ি বাড়ি করছে
নিজেদের উন্নতি
দেশ ডুবে মরছে।

ঘোষণা
ছোট্টবন্ধুরা! আগামী সংখ্যা থেকে তোমাদের জন্য চালু হচ্ছে তোমাদের বিভাগ মিষ্টিকুটুম। এই বিভাগে ১ম থেকে ৯ম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্র-ছাত্রীদের লেখা ছাপা হবে। সেরা দুইটি লেখার জন্য দেয়া হবে আকর্ষণীয় পুরস্কার। দেরি না করে এখনই লেখতে বসে যাও। লেখার নিচে অবশ্যই পূর্ণ ঠিকানা দিবে। সাথে শ্রেণি ও স্কুলের নামও উল্লেখ করবে।

ঘরকুটুম আগামী সংখ্যা আসছে ২৬ মার্চ
লিখতে ইচ্ছুকরা দ্রুত লেখা পাঠাও
rokon.raiyan@yahoo.com

No comments:

Post a Comment

ভালো লাগা রইল... অনেক ধন্যবাদ