আমার আমি যখন কিশোর ছিলাম তখনকার ঈদটা ছিল অন্যরকম। এখনকার ঈদের সঙ্গে তখনকার ঈদের আকাশ-পাতাল পার্থক্য। আমার মনে আছে, ঈদের দিন খুব সকালে উঠে সেজেগুঁজে ঈদগাহে চলে যেতাম। আমি ঈদগাহে যেতাম মুসলমানদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক আচকান পরে। ঈদের নামাজ শেষে বাড়িতে ফিরতে ফিরতে অনেক দেরি হয়ে যেত। ঈদগাহ থেকে শুরু করে পথে পথে কোলাকুলি করতে করতেই এই দেরিটা হতো। বাড়িতে ফিরলেই শুরু হতো খাওয়ার জন্য জোরাজুরি। এটা খাও, ওটা খাও বলে জোর করে খাওয়ানো হতো।
আজকাল যে রকম ঈদের দিন কদমবুছি করে টাকার জন্য দাঁড়িয়ে থাকে, তখন এরকম ছিল না। সালাম, কদমবুছির রেওয়াজ ছিল কিন্তু টাকা-পয়সার কোনো ব্যাপার ছিল না। ঈদের জামাতে যাওয়ার আগে আমরা সালাম করতাম, আবার জামাত থেকে ফিরেও সালাম করতাম কিন্তু কোনো সালামির রেওয়াজ ছিল না। আমাদের ঈদের নামাজ পড়াতেন খুবই বিখ্যাত একজন মানুষ। খুবই উদ্দীপনার সঙ্গে আমরা তার বক্তব্য শুনতাম। তিনি ছিলেন ফখরে বাঙাল মাওলানা তাজুল ইসলাম। উনার বক্তব্য খুবই ইন্টারেস্টিং ছিল। সে বক্তব্যে ছিল চমত্কার সব ধর্মীয় নির্দেশনা। আমরা এটা উপভোগ করতাম।
ঈদের দিন নানা মজাদার খাবার-দাবারের সঙ্গে পোলাও-কোর্মা ছিল কমন। গ্রামের সেই ঈদের সঙ্গে ঢাকার ঈদের পার্থক্য ছিল। ঢাকার ঈদটা ছিল ঢাকাইয়া স্টাইলে। রেওয়াজটা একটু অন্যরকম। ঢাকার সঙ্গে আমার আগে থেকেই যোগাযোগ ছিল। ঢাকায় অনেক আত্মীয়স্বজন ছিল, যাওয়া-আসা ছিল। ঢাকাইয়াদের ঈদের একটা ব্যাপার এরকম যে, যে বাসাতেই গেছি না খাইয়ে কিছুতেই ছাড়েনি। যেভাবেই হোক খেতে হবে। খাওয়া ছাড়া তারা ছাড়বে না।
সংসার জীবন যখন শুরু করলাম, তখন তো সংসারটাই আমাদের। তখন মুরব্বিদের মতো অন্যদের আপ্যায়ন করেছি। এখানে আমার একটা অভ্যাসের কথা বলা যায়, এটাকে বদঅভ্যাসও বলা যায়। এটা আমার এখনও আছে। এই বদঅভ্যাসটা হলো ঈদের দিন ঘরে শুয়ে থাকা। আমি শুয়ে শুয়ে ঈদের দিনটা কাটাই।
বর্তমান সময়ের ঈদ কিশোর বয়সের ঈদ থেকে অনেক আলাদা। এখন নাতি-নাতনিদের সংখ্যা বেড়েছে। তারাই এখন প্রধান। ঈদের দিন সালাম করে দাঁড়িয়ে থাকে সালামির জন্য। আমি অবশ্য যতটা সম্ভব এড়িয়ে যাই। যদি একেবারেই নাছোড়বান্দা হয়, তাহলে কিছু দিই।
এখনকার ঈদের যে বিষয়টি আমার কাছে মোটেও ভালো মনে হয় না, সেটা হচ্ছে এক ধরনের ভোগবাদী প্রবণতা। এটা মোটেও ভালো মনে হয় না। এমনিতেই মুসলমানদের উত্সব অপেক্ষাকৃত কম। এর মধ্যে রমজানের ঈদটা পবিত্র খুশির সঙ্গে উদ্যাপন করার কথা। কিন্তু আমার মনে হয়, এই পবিত্র উত্সবটা নানা বিষয়ের সঙ্গে মিশে একাকার হয়ে গেছে, যেটা হওয়া উচিত নয়। কাজী নজরুল ইসলাম তার গানে লিখেছেন—দে যাকাত মুর্দা মুসলিমের আজ ভাঙাইতে নিদ... এই চেতনাটা এখন আর তেমনভাবে ব্যক্ত হয় না। কিন্তু ঈদের প্রধান কথা তো এটাই। এটাই হওয়া উচিত। ভুলে যা তোর দোস্ত-দুশমন হাত মেলাও হাতে... এই শিক্ষাটাই বেশি প্রয়োজন।
ঈদ বিষয়ে আমি নিজেও বেশ কিছু কবিতা ও ছড়া লিখেছি। যদি প্রাসঙ্গিক হয়, তাহলে আমি লিখি। আমার ঠিক মনে নেই, তবে হযরত আলী রাদিআল্লাহু আনহুর খঞ্জরের সঙ্গে ঈদের বাঁকা চাঁদের তুলনা আছে আমার একটি কবিতায়। বাধ্যবাধকতা থাকলেও লিখি। এভাবে বেশ কিছু ছড়া-কবিতা লিখেছি ঈদ বিষয়ে।
আমি আসলে একটি সুন্দর পবিত্র উত্সব হিসেবে ঈদটা দেখতে চাই যেটা কমার্শিয়াল না, যেটার সঙ্গে অন্য অনেক বিষয় মিশে যায়নি, বরং সুন্দর পবিত্র আনন্দ।
No comments:
Post a Comment
ভালো লাগা রইল... অনেক ধন্যবাদ