Tuesday, November 1, 2011

ছোটবেলার নির্মল আনন্দের ঈদ

রোকন রাইয়ান : ‘আজ ঈদ, মদীনার ঘরে ঘরে আনন্দ’ ছোটবেলায় বইতে পড়া এ বাক্যের সঙ্গে কমবেশ পরিচিত সবাই।  কাসের বাংলা বইয়ের এই লাইনটা এখনো ছোটবেলার ঈদের উজ্জ্বল চিত্র। ঈদের আগে কেনাকাটার ব্যস্ততা, সকাল সকাল গোসল সেরে নামাজ, তারপর মহানন্দে পাড়া ঘুরে বেড়ানো। আর কুরবানি ঈদের সময় পশু নিয়ে ছোটাছুটি মাঝে মাঝে বড়দের ব্যস্ততাকেও ছাড়িয়ে যেত। হন্তদন্ত হয়ে ছোটাছুটি, বড়মানুষের মতো ব্যস্ততার মাঝে তখন টেরই পাইনি কিন্তু এখন ঠিকই বুঝি  ছোটবেলার সেইসব ঈদ প্রতিযোগিতায় এগিয়ে আছে বহুদূর।

গ্রামের বাড়িতেই সব সময় ঈদ করি। এক সময় কুরবানির ঈদটা হতো ঢাকায়। কোনো বাসা বাড়িতে নয়। মাদরাসায়। সেই ঈদগুলোতেও বিচিত্র সব আনন্দের পসরা সাজানো। মাদারাসায় ঈদ মানেই হাতে ছুড়ি। ছোটবেলার সেই দায়িত্ব-কর্তব্যহীন ছোটাছুটি না হোক, অন্যের মুখে হাসি তুলে নিজে আনন্দ পাওয়ার একটা ব্যাপার থাকত। এখন সেটাও ছোটবেলার মতো কাচের ফ্রেমে স্টিল হয়ে গেছে। মনে আছে, প্রথম কুরবানির রক্ত গায়ে আসার পর কি যে ভালো লেগেছিল। আর কি যে আনন্দ পেয়েছিলাম সেটা বলার ভাষা কই? তখন কেবলই মনে হয়েছিল এ রক্ত আরো মাখি গায়ে, সাদা পাঞ্জাবি-সালোয়ারে।
এলাকার কোটিপতির সবচেয়ে বড় গুরুটা কুরবানির দায়িত্ব পড়েছিল আমারই কাঁধে। তাও আবার সে বছর আমার প্রথম কুরবানি। মাত্র একটা গরু কুরবানির পর মনে সাহস যোগাতে শুরু করেছে। বেশ তো! ভালোই লাগে কুরবানি করতে। কিন্তু ‘ছোট্ট এই আমিটাকে দেখে’ যখন বড় গরুটা কুরবানি করার সময় লোকজন বলছিল এই ছেলে পারবে না, আমাদের বিপদে ফেলে দেবে, তখন কি যে উপায়হীনের মতো নির্জীব হয়ে গিয়েছিলাম সে সব ভুলতে পারি না কখনই!!

ছোটবেলার মতো এখন আবারো বাড়িতে ঈদ করি। তবে গ্রাম এখন গ্রামের মতো নেই। প্রযুক্তির ছোঁয়া লেগেছে। বাড়িতে বাড়িতে টিভি। সবাই খুব আয়েশ করে টিভি দেখে ঈদের দিন। শুনেছি ঈদের দিন নাকি সুন্দর ছবি বাছাই করে করে মুক্তি দেয়া হয়। আর সবাই নামাজ শেষ করেই টুপি ছুড়ে মারেন। ছোটরাও তাই করে। তাদের মনেও আমাদের মতো ছোটবেলার আনন্দের অনুসঙ্গ নেই। এখন নামাজ শেষ করে একাএকা হাঁটি রাস্তায়। গ্রামের কুরবানিগুলোও নিজেদের বাড়িতে একক হয় বলে লোকজন জড়ো হয় না। আর অধিকাংশ কুরবানিই হয় লোক দেখানো। অর্থবিত্তের সংখ্যা অনেক হলেও সে হারে কুরবানি নেই। বছরের একটা দিন যারা কুরবানির গোশত পাবেন বলে আশায় বুক বাঁধে তাদের কপালে একটা হাড়ও জোটে না। এতসব না সূচকের ভেতর কেবলই প্রত্যাশা সেই ছোটবেলার নির্মল আনন্দের ঈদ আর আসবে কি? 

2 comments:

  1. জীবনে আনন্দ একবারই আসে, আর সেটা হলো ছোটবেলায়... এবারও যারা মাদরাসার পক্ষ হতে ছুড়ি হাতে দেৌড় দিবেন, তারা দয়া করে কুরবানীল পশুরদিকে নজর দিবেন। দয়া করে রুপসি পটিয়সি, ধনাঢ্য কণ্যার দিকে তাকাবেন না। রেট নিবেন গরুপ্রতি ১০০০। আর ছাগল প্রতি ২৫০ থেকে ৫০০ টাকা।মাদরাসায় ফিরে মুহতামিমকে বলবেন, পর্যাপ্ত সালাদ এবঙ লেবুর ব্যবস্থা করতে। তারপর ব্যাগ গুছিয়ে বাড়ির দিকে রওনা। মনে মনে ভাববে আজ থেকে ৬০ বছর পূর্বে মরহুম মুহাম্মদুল্লাহ হাফজ্জী হজুরও এভাবে কুরবানীর চামড়া কালেকশন করেন। যার রেশ ধরে দাড়িয়েছে ঢাকার কওমী মাদরাসার ঐতিহ্য। রোকন কে ধন্যবাদ হৃদয়কাড়া লেখাটির জন্য।

    খালেদ সানোয়ার
    লেখক, সম্পাদক
    বাসাবো ঢাকা-১২১৪

    ReplyDelete
  2. Oshdharon apnar lekha.Amarou procondo lekha -lekher shokh...kintu................ Doa korben jeno apnar moto lekhok hote pari!

    ReplyDelete

ভালো লাগা রইল... অনেক ধন্যবাদ